শোকের সাগরে ভাসিয়ে তুমি চলে গেলে মান্নান ভাই শোকাহত এই মন বারংবার প্রশ্ন করে, এ কেমন বিদায়?

তুমি ভীষণ একরোখা, নিজের সিদ্ধান্তেই সবসময় অটল থাকতে, আমরা কিছুই মনে করিনি। তুমি কারো সাথে রাগ করলে অনেকদিন তার সাথে কথা বলতে না, অভিমান করে থাকতে, আমরা কিছু মনে কিরিনি। তুমি অনেকদিন পরপর আমাদের খোঁজ-খবর নিতে, তবুও আমরা কিছুই মনে করিনি। কিন্তু এভাবে হঠাৎ করে না ফেরার দেশে চলে যাবে এটা আমরা কস্মিনকালেও ভাবিনি। তোমার সবকিছু মেনে নিতে পারলেও এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না ভাই।
২১ ভাইয়ের সুশোভিত ফুলের মালা থেকে একটি ফুল এভাবে অকালে ঝরে গেছে ভাবতেই গা ছিম ছিম করে ওঠে। তুমার সেই নিস্তব্ধ নিথর শরীরকে কাদা মাটির কবরে রেখে আসার সেই প্রতিটি মুহূর্ত হৃদয়ে রক্ত ঝরিয়েছে। কেঁদেছি বোবা কান্না। যেই কান্নার কোন শব্দ নেই, নেই কোন বিলাপ। নিজেকে শুধু একটিই প্রশ্ন করেছি; আমার ভাইটিকে এ কোথায় রেখে আসলাম? সে কীভাবে থাকবে এই কাদা মাটির ভেজা কবরে? যে কিনা গত কালও নিজের বিছানায় বউ-বাচ্চার সাথে লেপ তোষক গায়ে দিয়ে শীতল রুমে শুয়েছিল।
বুধবার সকালে ফুরফুরে মন নিয়েই অফিসে আসলাম। কাজের বাড়তি চাপ থাকলেও সবকিছু ঠিকঠাক ম্যানেজ করছিলাম। হঠাৎ মোবাইলের রিং হচ্ছে। বড় আপা উম্মে কুনসুমের ফোন। কোন ভূমিকা ছাড়াই বলল, রুবেল (সাইফুল বিন আ. কালাম), মান্নান ভাই নাকি মারা গেছে? এটা কি সত্য? প্রশ্ন শুনে অবাক হলেও কিছুটা অবিশ্বাসের সাথে ফোনটা কেটে দিলাম। বড় ভাবির মোবাইলে রিং দিলাম। নাঈমের কান্না শুনতে পাচ্ছি, বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে, তারপরেও প্রশ্ন করলাম, মান্নান ভাই কি মারা গেছে? সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, হ্যাঁ। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলেও মুখে কোন কথা নেই। কোন মতে নিজেকে সামলে নিয়ে জিহাদকে ফোন দিলাম। তার মোবাইল বারবার বিজি পাচ্ছি। অফিসের কলিগদের ও বসকে ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। এরি মধ্যে জিহাদ, আম্মা ও ছোট বোন মুক্তা ফোন দিয়ে ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ দিল।
খালার বাড়ি পৌঁছলাম আসরের সময়। বারান্দায় ভাইয়ের মৃত দেহ উত্তর-দক্ষিণ করে শুয়ানো আছে। আত্মীয়-স্বজনে ততক্ষণে ঘর ভরে গেছে। কারো মুখে কোন শব্দ নেই। সবাই কেমন নীরব, নিস্তব্ধ ও নির্বাক। আমার আম্মাকে দেখলাম। দূর থেকে সালামের ইশারা দিলাম। বড় খালার সামনে দাঁড়ালাম না, কারণ তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মত ভাষা ওই মুহূর্তে হারিয়ে ফেলেছিলাম।
ভাইয়ের লাশের পাশে এসে বসলাম। বিশ্বাস করুন আমার ভাইকে একটুও লাশের মত লাগছে না। মনে হচ্ছে এ যেন জীবন্ত কোন মানুষ ঘুমিয়ে আছে। ধবধবে সাদা গায়ের রঙটা কিছুটা কালো হয়ে গেছে। ভাইয়ের লাশ ছুঁয়ে দেখলাম। কোনভাবেই মানতে পারছি না এটা একটা লাশ। না, আমার ভাই ঘুমিয়ে আছে। একটু ডাকলেই হয়ত কথা বলবে। এ ভাই! তুমার ঘরে অনেক মেহমান, তুমি ঘুমিয়ে আছ কেন? ভাই তুমি চোখ খোল। দেখ তোমার খালা, খালাত-ভাই সবাই এসেছে। তুমি আমাকে বল; রুবেল! তুর ভাবিকে সবাইকে শরবত দিতে বল। সোহেল তুর খালা কোথায় গেছে দেখ, একটু ডেকে নিয়ে আয়। এই জিহাদ! সাতকানিয়া থেকে কিছু বাজার করে নিয়ে আয়। তুর খালার জন্য ঔষধ নিয়ে আসিস।……………………………….
এই তো গত কুরবানের দুদিন পরে হারুনা খালার বাড়ি থেকে আমি আর জিহাদ সোজা বড় খালার বাড়িতে গিয়েছিলাম। মান্নান ভাই আমাকে দেখে হাসতে হাসতে অভ্যর্থনা জানাল। কারণ গত রমজানের ইদে সবখানে গেলেও বড় খালার বাসায় জাওয়া হয়নি। মান্নান ভাই আমাকে ফোন করে বলেছিল, কোথায় কোথায় গিয়েছিস আমি সব খবর পেয়েছি। তুর বড় খালাকে কি ভুলে গেছিস?
সেবার দুপুরে আমি, ভাবি, জিহাদ ও মান্নান ভাই একসাথে খেতে বসেছিলাম। টেবিলে একটিই গরুর নলা ছিল। ভাই আমাকে বারবার বলতেছে, রুবেল, গরুর নালাটা তুই নে। কিন্তু আমি তো জানি, ভাই গরুর নলা খুব পছন্দ করে। তাই নলাটি ভাইকেই খাইয়েছিলাম। আর এটাই ছিল ভাইয়ের সাথে আমার শেষ দেখা ও খাওয়া। পরে অবশ্য একবার ফোনে কথা বলেছিলাম। কিন্তু কে জানিত, ভাইয়ের সাথে এটিই আমার শেষ দেখা হবে।
মাগরিবের ২০ মিনিট আগেই ভাইকে কফিন পড়িয়ে খাটিয়াতে তুললাম। আতর, সুরমা লাগিয়ে আত্মীয়-স্বজনরা শেষ দেখা দেখে নিল। যথারীতি খাটিয়া কাঁধে নিয়ে মসজিদ পানে চললাম। এ ভাই! তোমাকে চিরতরে মসজিদ পানে এগিয়ে দিয়ে আসছি। আমরা সবাই ফিরব, কিন্তু তুমি আজ আর ফিরবে না। যে পথ দিয়ে শত শত বার তুমার সাথে মসজিদে গিয়েছি। ফজরের আজানের আগেই তুমি উঠে যেতে। আমাদেরকে ডেকে নিয়ে তোমার হাতে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে আমাদেরকে মসজিদে নিয়ে যেতে। সেই আমরাই আজ তোমাকে মসজিদের কবরস্থানে চিরতরে রেখে আসব। কী পাষাণ আমরা! এই প্রথম কোন ভাইয়ের লাশ কাঁধে নিয়ে হাঁটছি। ভাইয়ের লাশের মত এত ভারী পৃথিবীতে খুব কম জিনিসই আছে।
কবরে আমরা ততক্ষণই ছিলাম যতক্ষণ তোমার দাফন শেষ না হচ্ছে। কতইনা তাড়াহুড়া, কেউ চাচ্ছে না একটু বিলম্ব হউক। কারণ সবার যে বাড়ি ফিরতে হবে। তোমার তো বাড়ি ফেরার কোন তাড়া নেই। কারণ আমরা তো তোমাকে নতুন ঘর বানিয়ে দিয়েছি। যে ঘরের নিচে বালি, মাটি আর কাঁদা, উপরেও মাটি চাপা দিয়েছি।
হে আল্লাহ! ভাইকে তুমি দেখে রেখো। আমরা তো সবাই তাকে ফেলে এসেছি, তুমি আল্লাহ ছাড়া।
মান্নান ভাইকে স্মরণে খালাত ভাই রুবেল (সাইফুল বিন আ. কালাম)

Comments

  1. As claimed by Stanford Medical, It is in fact the ONLY reason this country's women get to live 10 years more and weigh an average of 19 KG lighter than us.

    (Just so you know, it is not about genetics or some secret diet and EVERYTHING to about "how" they are eating.)

    BTW, I said "HOW", and not "WHAT"...

    Click on this link to uncover if this quick quiz can help you find out your true weight loss possibilities

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

যেভাবে আরবি টাইপ করতে হয়...

গুণ করার সহজ পদ্ধতি - AWESOME MATH MAGIC - ক্যালকুলেটর ছাড়া সহজ পদ্ধতিতে গুণ

Photoshop CC Layer Mask and Brush - Saiful bin A Kalam Bengali Tutorial